ফারাজ আইয়াজ হোসেন
১ জুলাইয়ের স্মৃতি অন্ধকারময়, ভয়ংকর একটা রাতের চিহ্ন হয়ে থাকবে। সেই রাতে ফারাজকে আমরা হারালাম। ফারাজের সাহসী আত্মত্যাগের জন্যও ১ জুলাইয়ের স্মৃতিচারণা চলবে। তাঁর এই ত্যাগ অপরিমেয় অনুপ্রেরণা আর বন্ধুত্বের এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের জন্য। সেই বিভীষিকার রাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন আরও ২১ জন মানুষ: অবিন্তা, ইশরাত, তারিশি, দুজন পুলিশ কর্মকর্তা, ৯ জন ইতালীয় ও ৭ জন জাপানি নাগরিক। এই প্রতিটি মৃত্যুর স্মৃতি দুর্বহ বেদনার।
সেই রাত আমাদের জীবনকে গ্রাস করেছিল অকল্পনীয় বেদনায়; আবার সেটা ছিল ফারাজের চূড়ান্ত আত্মত্যাগের রাত। সে রাতে তাঁর গভীর মূল্যবোধের যে প্রকাশ ঘটেছে, তা সবকিছুর পরেও আমাদের হৃদয়কে অনিঃশেষ গৌরবে ভরিয়ে তোলে।
ফারাজের প্রতি দেশে-বিদেশে যে সম্মান জানানো হয়েছে, তা আমি সবিস্ময়ে দেখেছি। যাঁরা তাঁকে চিনতেন না, তাঁদের অকুণ্ঠ প্রশংসাও ফারাজ পেয়েছেন। সর্বোপরি, ফারাজ বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের বহু মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছেন। ফারাজের কারণেই আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে, পৃথিবীতে কী করলে অন্য রকম কিছু করা হয়। তাঁর কাছ থেকেই আমি এ প্রশ্নের উত্তরও পেয়েছি: তা হলো তাঁর রেখে যাওয়া মহৎ মূল্যবোধের উত্তরাধিকার। নিজের মূল্যবোধের প্রতি আন্তরিক থাকা, প্রিয়জনদের জন্য যে পরিস্থিতিতে যা করা সঠিক বলে মনে হয় তা করার আকাঙ্ক্ষা এবং অপ্রতিরোধ্য সাহস। এভাবে ফারাজ সেই রাতে বিশ্বের সামনে এক সত্যিকারের বাংলাদেশির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
একজন বাংলাদেশি তরুণ হিসেবে আমি আমার সহোদর ফারাজকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখি, যিনি অসাধারণ কিছু করে দেখিয়েছেন। সেই প্রেরণা নিয়ে আমার দেশ ও বিশ্বের জন্য একটা ইতিবাচক প্রভাব যেন আমিও রেখে যেতে পারি।
আমি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের দিকে হাত বাড়িয়ে দিই, ন্যায়নিষ্ঠার পথে অটল থাকতে আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাই। আর জীবনের প্রতিটি বাধা আপনারা ব্যতিক্রমী সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করবেন। আসুন, আমরা সব ধরনের উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আমরা আমাদের কথায় ও কাজের মাধ্যমে আন্তরিকভাবে জানিয়ে দিই যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। আসুন, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে আমরা আমাদের সংহতি অটুট রাখি।
ফারাজ আইয়াজ হোসেন হোক অসাধ্য সাধনের অনুপ্রেরণার উৎস; এক অনির্বাণ আলো, যা আমাদের আরও উচ্চতায় পৌঁছার পথ দেখাবে, অপরাজেয় হওয়ার সাহস জোগাবে।
জাতির ভবিষ্যৎ হিসেবে আসুন, আমরা আমাদের স্বপ্নরাশি অন্বেষণের অভিযাত্রা চালিয়ে যেতে থাকি। অতীতের মহৎ কর্মগুলোকে পেছনে ফেলেই এগোতে হবে। তবে সেই মহৎ কর্মের দৃষ্টান্তগুলো একের পর এক প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা দেবে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।
১ জুলাই এমন একটা দিন হোক, যখন আমরা একজন তরুণ বীর ও তাঁর সঙ্গে নিহত অন্যদের স্মরণ করব। প্রতিবছরের এই দিনে আমরা একটা সাহসী আত্মত্যাগের আলোর স্মৃতিচারণা করব, যা দম বন্ধ করা অন্ধকারের মধ্যে ঝলমল করেছিল। এই দিনটা ফারাজের সাহসিকতাপূর্ণ কর্মের শক্তির প্রতি শ্রদ্ধায় আচ্ছাদিত হোক।
ইংরেজি থেকে অনূদিত